সরদার নজরুল ইসলাম, বানারীপাড়া প্রতিনিধি ॥ সদ্য প্রয়াত ভারতের পদ্মভূষণ পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষের পৈতৃক নিবাস বরিশালে জেলার বানারীপাড়া উপজেলার পৌর শহরের ৪নং ওয়ার্ডের ঘোষবাড়িতে। সাহিত্য-সংস্কৃতিতে ঐতিহ্যবাহী নদীবিধৌত বানারীপাড়ার মধ্য দিয়ে কুলু কুলু ধ্বনিতে বয়ে চলেছে প্রমত্তা সন্ধ্যানদী। সন্ধ্যাতীরের বানারীপাড়া পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে ছিল কবি শঙ্খ ঘোষের পৈতৃকবাড়ি। জানা গেছে, আশির দশকে কবি একবার বানারীপাড়ায় এসেছিলেন। সর্বশেষ কবি তার পূর্বপুরুষের ভূমিতে ১৯৯৭ সালে এসেছিলেন। কবির বংশীয় ভ্রাতুষ্পুত্র উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার তরুণেন্দ্র নারায়ণ ঘোষ ওরফে তরুণ ঘোষ বলেন, বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম সালেহ্ মঞ্জু মোল্লার বাড়ির পশ্চিম পাশেই ছিল কবির পৈতৃক নিবাস। তাঁর জন্মস্থান চাঁদপুরে নানাবাড়িতে হলেও এখানেই কবির শৈশব-কৌশোরের অনেকটা সময় কেটেছে। কবি ১৯৯৭ সালে বানারীপাড়া এসে পৈতৃক ভিটাসহ তার শৈশবের স্মৃতি জড়ানো স্থানগুলো ঘুরে গেছেন। তিনি আরো জানান, কবি শঙ্খ ঘোষ সন্ধ্যানদীকে খুব ভালোবাসতেন। কলকাতা গেলে বারবার বলতেন, ‘আরেকবার সন্ধ্যানদীর তীরে যেতে চাই।’ এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম সালেহ্ মঞ্জু মোল্লা বলেন, আশির দশকেও কবি বানারীপাড়া এসেছিলেন। তখন আমাদের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ করেন। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোয়াজ্জেম হোসেন মানিক জানান, বানারীপাড়া পৌর শহরের ৪নং ওয়ার্ডের ঘোষবাড়িটি কবি শঙ্খ ঘোষের পূর্বপুরুষের ভিটা। এটি তাঁর শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত স্থান। দর্শনীয় স্থান হিসেবে এটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। ১৯৯৭ সালে কবি শঙ্খ ঘোষ বানারীপাড়ায় এলে তার সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছিলেন তৎকালীন বানারীপাড়া পাইলট হাইস্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী বর্তমানে বিটিভির স্টাফ রিপোর্টার সাংবাদিক সুজন হালদার। তিনি বলেন, কবি নৌকায় করে ঘুরে বেরিয়েছেন। দেখেছেন পৈতৃকভিটা-বাড়ি। যাওয়ার সময় পৈতৃকভিটার মাটিও নিয়ে গেছেন কোলকাতায়। গত বছরের ৮ মার্চ কলকাতার কফি হাউসে কবির সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয়। তখন কবি বলেছিলেন, ‘আরেকবার যেতে চাই বানারীপাড়ার সন্ধ্যানদীর তীরে।’ সাংবাদিক সুজন হালদার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে কবির স্মৃতি রক্ষায় “শঙ্খ ঘোষ স্মৃতি জাদুঘর” এর দাবি জানান। ১৯৯৭ সালে বানারীপাড়া ঘুরে গিয়ে কবি শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন তার স্মৃতিকথা- ‘সন্ধ্যানদীর জলে: বাংলাদেশ’। প্রথমা প্রকাশন ২০১৯ সালে কবির স্মৃতিকথা বই আকারে প্রকাশ করে। বইটিতে কবি লিখেছেন, ‘৫০ বছর পর চলেছি নিজ গ্রামে। পাকা রাস্তা ধরে গাড়ি চলছে বানারীপাড়ার পথে। আমাদের ছোটবেলায় বাহন ছিল নৌকা।’ তিনি আরও লেখেন, ‘সকালের রোদে ঝলমল করছে সন্ধ্যানদীর জল। স্টিমারঘাট এখন আর নেই। আছে শুধু সারি বাঁধা নৌকা। মাঝিরা আমার কাছে জানতে চায়, আমি কি ওপারে যেতে চাই? সন্ধ্যানদী ছুঁয়ে আছে আমাদের গ্রাম।’ কবি ২০১৯ সালের বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে আসলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বানারীপাড়া আসতে পারেননি। বানারীপাড়ার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোয়াজ্জেম হোসেন মানিক বলেন, কবির মৃত্যুর খবর জানার পরপরই পৌর শহরে মাইকিং করে সবাইকে জানানো হয়েছে। আমরা কবির স্মৃতি রক্ষা করতে চাই। ঈদের পরেই শোকসভা করা হবে। কবি শঙ্খ ঘোষের স্মৃতি রক্ষায় সরকারি সহায়তা কামনা করেছেন তিনি।
Leave a Reply